ক্লাস এ ঢুকেই মিথিলার মেজাজটা খারাপ হয়ে
গেল। কারন তখনো কেউই এসে
পৌঁছায়নি। শুধুমাত্র রাতুল পিছনের
টেবিলটাতে একা বসে আছে। এই
ছেলেটাকে মিথিলা একদমই পছন্দ করে
না। ক্লাসের সবচেয়ে
অমনোযোগী ,
বাজে ছাত্র হিসেবেই রাতুল পরিচিত । আর
দেখতেও
কেমন জানিঅগোছালো। মাথার
চুলগুলো উসকো-খুসকো ।
পরনের কাপড়
গুলোও
অপরিষ্কার । মিথিলাকে
দেখলেই ছেলেটা কেমন জানি হা করে তাকিয়ে
থাকে । এই কারনে ছেলেটাকে মিথিলার
আরও
বেশি অপছন্দ ।
বিকেলবেলা মিথিলা তার বান্ধবী লগ্নের সাথে কথা বলার
এক পর্যায়ে জানতে
পারলো যে তাদের ক্লাসের রাতুল
, সুজয়ের কাছে মার খেয়ে মাথা ফাটিয়ে
ফেলেছে ।
মিথিলা , সুজয়কে খুব ভাল করেই চেনে । আগে
প্রায়ই রাস্তায় মিথিলাকে বিরক্ত করতো ।
বখাটে ছেলেরা তো মারামারি করবেই , এটাই
তো স্বাভাবিক । তাই , রাতুলের মাথা ফাটানোর
ব্যাপারটা মিথিলার মনে
একটুও
ছেদ ফেলল না ।
মিথিলা মন খারাপ করে কলেজের বারান্দায় দাড়িয়ে
আছে । আজকে
ওর
পরীক্ষাটা খুবই খারাপ হয়েছে
। পাশ করতে
পারবে বলে মনে হয় না । এত চিন্তার কারন ছিল না যদি
এটা নির্বাচনী পরীক্ষা না হয়ে সাধারণ
কোন পরীক্ষা হতো । কিন্তু
, নির্বাচনী
পরীক্ষায়পাশ না করতে
পারলে তো সে এইচ.এস.সি
পরীক্ষায় অংশগ্রহন
করতে পারবে না ।
পরের দিন কলেজে গিয়ে মিথিলা
খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল । কারন, গত রাতে নাকি
শর্ট-সার্কিট এ আগুন লেগে
ওদের
পরীক্ষার খাতা পুড়ে
গেছে । তাই গতদিনের পরীক্ষাটা আবার
অনুষ্ঠিত হবে ।
এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ
হওয়ার কিছুদিন
পরেই মিথিলার ক্যান্সার ধরা পড়ল ।
ধীরে ধীরে রোগটা সারা
দেহে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করল । কিন্তু
, অপারেশন করতে
যে পরিমাণ টাকা দরকার তা জোগাড় করাটা মিথিলার
পরিবারের পক্ষে সম্ভব
হচ্ছিলো না । শেষ পর্যন্ত ধার-
দেনা করে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করে
অপারেশন করা হল ।
আল্লাহের রহমতে এবং সবার দোয়ায় মিথিলা সুস্থ হয়ে
উঠলো ।
হওয়ার কিছুদিন
পরে মিথিলার কাছে একটা চিঠি আসে ।
ছিল এইরকম :
প্রিয় মিথিলা ,
কলেজে যে দিন তোমাকে
প্রথম দেখেছি সে দিন থেকেই
তোমাকে অনেক
ভালবেসে ফেলেছি । কিন্তু, একটা বখাটে
ছেলের ভালবাসাকে তুমি কোনদিনই মেনে
নেবে না । তাই , ভেবেছিলাম লুকিয়ে যতটাভালবাসা যায় ততটাই
ভালবাসবো ।
যে দিন লোক ভাড়া করে এনেছিল
তোমাকে কিডন্যাপ করার জন্য , সে দিন
ওদের
সাথে মারামারি করেছিলাম শুধু তোমাকে
বাঁচাবো বলে।
লগ্নের কাছে জানতে পেরেছিলাম,
তোমার নির্বাচনী পরীক্ষায় রসায়ন
পরীক্ষাটা খুব খারাপ হয়েছিল
। তাই, সে দিন রাতেই কলেজের
অফিসে তালা ভেঙ্গে ঢুকে খাতা
পুড়িয়ে দিয়েছিলাম শুধু তোমার
মুখে একটু হাসি দেখব বলে। কিন্তু , দারোয়ানের
কাছে ধরা পরে গিয়ে ছয় মাসের জেল
হল। কলেজেরই ছাত্র কাজটা করেছে বলে
ব্যাপারটা শর্ট-সার্কিট এ আগুন লেগেছে
বলে চালিয়ে দেয়া হল। তাই আর এইচ.এস.সি
পরীক্ষাটা দেয়া হল না।
জেল থেকে বের হয়ে শুনলাম, তুমি ক্যান্সার
এ আক্রান্ত। টাকার অভাবে তোমার
অপারেশন হচ্ছেনা
জেনে কোন উপায় না দেখে
নিজের কিডনি বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করলাম শুধু তোমায় ভালবাসি বলে
।
আমি জীবনের শেষ পর্যায় এ
এসে উপস্থিত হয়েছি । আমার
অবশিষ্ট কিডনিটা অনেক আগে
থেকেই নষ্ট ছিল ।এখন অবস্থা দিনে
দিনে আরও
খারাপ হচ্ছে । ডাক্তার বলেছে, আর খুব
বেশি দিন বাঁচবো না । তাই মারা
যাওয়ার আগে ভাবলাম
,সেই কথাটা বলে যাই । যে কথাটা আজো তোমায়
বলতে পারিনি ।
তোমাকে ভালবাসি মিথিলা । অনেক
ভালবাসি ।
ভাল থেকো ।
,
তোমাদের ক্লাসের সবচেয়ে বাজে
ছেলে
রাতুল
মিথিলার চোখ দিয়ে পানি
পড়তে পড়তে চিঠিটা ভিজে
গেল….